
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৪ মাস আগে। তারপরও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে দেশের বৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটির কার্যক্রম। একইসঙ্গে দীর্ঘ এক বছরের বেশী সময় পার হলেও বিভিন্ন শাখা কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা। আর তাই শীঘ্রই বিলুপ্ত করা হবে জেলা-মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
কেন্দ্রীয় এ সেক্রেটারী এক প্রশ্নের উত্তরে প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানায়, ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। করোনার কারণে কমিটি বিলুপ্ত করতে কিছুটা দেরী হচ্ছে। তবে শীঘ্রই আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ দুই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই একই দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেন তৎকালীণ কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এদিন আজিজুল রহমান আজিজকে সভাপতি ও আশরাফুল ইসমাঈল রাফেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৮৮ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন তারা। এছাড়া এ কমিটিতে ৪০ জন সহ-সভাপতি, ১১ জন যুগ্ম সম্পাদক ও ১১ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়।
অপরদিকে, একইদিনে ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে হাবিবুর রহমান রিয়াদকে সভাপতি ও হাসনাত রহমান বিন্দুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এ কমিটিতে ১১ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১১ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক, ৩২ জনকে সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ১৫ জন সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়।
ছাত্রলীগ সুত্রে জানা যায়, এ দুই কমিটি গঠনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক থানা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও কলেজ শাখা গঠনে ব্যর্থ হয়েছে জেলা-মহানগরের নেতৃবৃন্দরা। ফলে একদিকে এসব শাখা কেন্দ্রীক সাংগঠনিক কার্যক্রম যেমন স্থবির হয়ে পড়েছে, তেমনি এসব কমিটির পদ পত্যাশীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সুত্রের দাবী, বিভিন্ন সময়ে এসব শাখা কমিটি গঠনের জন্য নেতাকর্মীদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। জেলা-মহানগর কমিটি গঠনের সময়ে তিন মাসের মধ্যে সকল থানা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। কমিটি গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেনি কমিটির নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের একাংশ হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে জেলা-মহানগরের নেতৃবৃন্দরা প্রায় বলে থাকেন, শীঘ্রই সম্মেলনের মাধ্যমে এসব শাখার কমিটি দেয়া হবে।
থানা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটির পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন শাখাগুলোর নতুন কমিটি না হওয়ায় মিছিল-মিটিংসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। যেসব শাখা কমিটি হয়নি সেসব শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী যারা দীর্ঘদিন থেকে পরিশ্রম ও সময় দিলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।
সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাংগঠনিক জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। হিসেব অনুযায়ী, ৪ মাস পূর্বেই জেলা-মহানগর শাখার মেয়াদ শেষ হওয়ায় শীঘ্রই এ দুই কমিটি বিলুপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে প্রথমে বলেন, মেয়াদ আছে তো। তবে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীর মতে কমিটির মেয়াদ শেষ একথা জানালে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে বলেন, উনি যদি বলে থাকেন তাহলে ভাইয়েরা বলতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, আমি যতটুকু জানি যখন নতুন সেন্ট্রালের নতুন কমিটি গঠিত হয় তখন ৯৫% জেলায়ই নতুন কমিটি গঠিত হয়। আমাদের কমিটির মেয়াদ হয়েছে ১ বছর ৪ মাস, সেক্ষেত্রে এ ধরনের কমিটিগুলো নতুন কমিটি দিতে দেখি নি কোথাও। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক বছর মেয়াদী কমিটি দেয়া হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
একই বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে প্রথমে বলেন, নাহ আমাদের মেয়াদ শেষ না, আমাদের কমিটি রানিং আছে। আমাদের তো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হইলো মাত্র এক বছর হইছে। পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে এসে প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক বছর একটা মেয়াদ বেধে দেয় কিন্তু এটা সাংগঠনিক ক্ষমতা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি যদি চায় একটি সংগঠন ভালো কাজ করছে, তাকে এক বছরের জায়গায় দুই বছর, চার বছর এক্সটেন্ড করে চালাবে, এটি সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী কেন্দ্রীয় কমিটি।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের মতে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং শীঘ্রই কমিটি বিলুপ্ত করা হবে এমন কথা জানালে রিয়াদ বলেন, নাহ এ ধরনের কোনো কর্মসূচী আমরা শুনি নাই। তারপরও কেন্দ্র সকল ধরনের ক্ষমতা রাখে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সবশেষে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা-মহানগর শাখার কমিটির মেয়াদ এক বছর বলে স্বীকার করেন তিনিও।
No posts found.